বছরে ইতিমধ্যে তিনটি ঘূর্ণিঝড় তেজ, হামুন ও মিধিলি সংগঠিত হয়েছে। এবার আসছে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম। যা এ বছরের সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হতে পারে।
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে আবহাওয়া ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ।
ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা ও ভারতীয় উপ মহাদেশের উপর সাব-ট্রপিকাল জেট স্ট্রীমের অবস্থান এর প্রভাবে লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে ২৮ থেকে ২৯ শে নভেম্বর এর মধ্যে। গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ২৯ থেকে ৩০ নভেম্বর এর মধ্যে। ডিসেম্বর মাসের ১ তারিখের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে ডিসেম্বর মাসের ১ থেকে ২ তারিখের মধ্যে বাংলাদেশের বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকার জেলাগুলো ও মায়ানমারের রাখাই রাজ্যের মধ্যবর্তী কোন এলাকার উপরে দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত দৃশ্যমান চিত্র (visible imagery) বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের আকাশের উপরে মেঘ প্রায় পুরোপুরি অনুপস্থিতি। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মেঘ মুক্ত আকাশ বিরাজ করলে তা ভূ-পৃষ্ঠের কাছা-কাছি স্থানে বায়ুর উচ্চচাপ ও বায়ুমণ্ডলের উপরের দিকে বায়ুর নিম্নচাপ অবস্থা নির্দেশ করে। আজ সকাল ৯ টার সময় ঢাকা বিমানবন্ধরে বায়ুচাপ পরিমাণ করা হয়েছে ১০১৬ মিলিবার। ভারতের বিহার রাজ্যের পুনে শহরের উপরে বায়ুচাপ ছিলও ১০১৪ মিলিবার। বায়ু চাপের এই মান নির্দেশ করতেছে যে ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপরে উচ্চ বায়ুচাপের উপস্থিতি।
এখানে উল্লেখ্য যে, স্বাভাবিক অবস্থায় ভূমির কাছা-কাছি স্থানে বায়ুর নিম্নচাপ ও উপরের দিকে বায়ুর উদ্ধচাপ অবস্থা বিরাজ করে। বায়ু সাধারণত উচ্চ-চাপ অবস্থা থেকে নিম্নচাপ অবস্থায় গমন করে। ভূ-পৃষ্ঠের কাছা-কাছি স্থানে বায়ুর উচ্চ-চাপ অবস্থা বিরাজ করলে সেই স্থানে মেঘের সৃষ্টি বাধাপ্রাপ্ত হয়। শুক্রবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের কোন জেলার উপরে বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল (ECMWF Integrated Forecasting System) হতে প্রাপ্ত আবহাওয়া পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে, শুক্রবার দুপুর ২ টার পর থেকে আগামীকাল শনিবার দুপুর ২ টার মধ্যে বাংলাদেশের অন্য কোন জেলার উপরে বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
আজ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম নামক আবহাওয়া মডেল (ECMWF Integrated Forecasting System) হতে প্রাপ্ত আবহাওয়া পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে আগামী সোমবার পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জেলার উপরে বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত কুয়াশা পূর্বাভাস
আজ মধ্যরাতের পর থেকে আগামীকাল শনিবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত মাঝারি থেকে বেশি ঘনত্বের কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের একাধিক জেলার উপরে। অপেক্ষাকৃত বেশি কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ টি জেলা, রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, রংপুর বিভাগের দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও উপরে।
এদিন দুপুর ২ টার পর থেকে আগামীকাল শনিবার দুপুর ২ টার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলোর উপরে বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। আজ শুক্রবার মধ্যরাতের পর থেকে আগামীকাল শনিবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত মাঝারি থেকে বেশি ঘনত্বের কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, ও বর্ধমান জেলার উপরে।
বিশ্বের প্রধান-প্রধান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো আগামী ২৫ ই নভেম্বর থেকে ২৮ শে নভেম্বর এর মধ্যে ভারতের আন্দামান ও নিকবার দ্বীপের আশ-পাশে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে সকল।
সমুদ্র-গামী জেলেদের জন্য পূর্বাভাস
সম্ভাবনা খুবই বেশি আগামী সপ্তাহের সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও রাখাইন রাজ্যের উপকূলে আঘাত করার। দ্বীপের জেলেরা যেন অবশ্যই ২৮ শে ডিসেম্বরের মধ্যে উপকূলে ফেরত চলে আসার প্রস্তুতি নিয়ে রাখে; কিংবা সেই হিসাব করেই সমুদ্রে যাত্রা করে যে জেলেরা এই সপ্তাহে সমুদ্রে যাত্রা করার পরিকল্পনা করেছে। আগামী সপ্তাহের সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি সর্বশেষ ২ টি ঘূর্ণিঝড় (হামান ও মিধিলি) অপেক্ষা বেশি শক্তিশালি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ-গামী পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা
২৮ শে নভেম্বরের পর থেকে ডিসেম্বরের ৩ তারিখ পর্যন্ত টেকনাফ-টু-সেন্টমার্টীন নৌযান চলাচল বন্ধ থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ২৮ শে নভেম্বরের মধ্যে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন দ্বীপ ত্যাগ না করলে আটকা পড়ার সম্ভাবনা।