বরিশাল বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার ১৬ জানুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে দুদকের বরিশাল জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এইচএম আক্তারুজ্জামানের নেতৃত্বে অভিযান শুরু করা হয়। সেবা প্রত্যাশীদের দেওয়া সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা অভিযানে পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে আসা একাধিক সেবা প্রত্যাশীর সঙ্গে কথা বলেন দুদকের কর্মকর্তারা। সেবাপ্রত্যাশীরা জানান, আবেদনপত্র গ্রহণে হয়রানি, ভুল নির্দেশনা দিয়ে এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে ঘুরানো, অফিসের বাইরের নির্ধারিত দোকান দিয়ে আবেদন করাতে বাধ্য করা এবং দালালদের দৌরাত্ম মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
হিজলা থেকে আসা শাকিল বলেন, তিন মাস আগে আমি পাসপোর্টের আবেদন করে সেই পত্র জমা দিতে এসে হয়রানির শিকার হয়েছি। সরকার নির্ধারিত টাকার চেয়ে দুই হাজার টাকা বেশি দিয়ে অবশেষে আজ আমি পাসপোর্ট হাতে পেয়েছি। বরিশাল পাসপোর্ট অফিসে দালাল ছাড়া কাজ করা প্রায় অসম্ভব।
বরিশাল নগরীর বাজার রোড এলাকার বাসিন্দা বশির সস্ত্রীক এসেছেন পাসপোর্ট অফিসে। তিনি বলেন, আমি, আমার মা ও আমার স্ত্রীর তিনটি পাসপোর্ট করিয়েছি। তাতে ভয়ংকর রকমের হয়রানির শিকার হয়েছি। এই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কি কি কাগজপত্র দরকার একসঙ্গে তা কখনোই বলেন না। বারবার সময়ক্ষেপণ করে মূলত দালালের দ্বারস্থ হতে বাধ্য করেন। তিনটি পাসপোর্ট করতে সরকার নির্ধারিত ৫৭৫০ টাকার চেয়ে বাড়তি তিন হাজার টাকা বেশি দিতে হয়েছে।
সেবা প্রত্যাশীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী বাসুদেব, আনসার সদস্য রফিক ও সৌরভকে উপ-পরিচালক আবু নোমান মো. জাকির হোসেনের কক্ষে অভিযোগের মুখোমুখি ও পাসপোর্ট অফিসে পাওয়া অনিয়মের বিষয়ে উত্থাপন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আজকে আমি একটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়েছি। যদিও সেটিতে আর্থিক লেনদেন হয়নি। কিন্তু অভিযোগ যেহেতু সুনির্দিষ্ট সেহেতু আমি আমার অফিসের ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করব। আমি সরকারি কর্মকর্তা, আমার কাজ হচ্ছে মানুষকে সেবা দেওয়া। এর ব্যত্যয় হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক এইচএম আক্তারুজ্জামান বলেন দুদক হেডকোয়ার্টার থেকে এনফোর্সমেন্ট অভিযানে আমরা এসেছি। একজন সেবাগ্রহীতা বরিশাল পাসপোর্ট অফিসের বিরুদ্ধে, এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালদের দৌরাত্মে হয়রানি, পাসপোর্ট পেতে ভোগান্তি ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ দিলে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। আমরা অনিয়মের চিত্র দেখতে পেয়েছি। এখানে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনিয়ম রোধে সেবা প্রত্যাশীদের সচেতন করেছি, পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বরত যুগ্ম-পরিচালককে পরামর্শ দিয়েছি অনিয়ম বন্ধে তিনি যেন কার্যকর ভূমিকা রাখেন। যুগ্ম পরিচালক আমাকে আশ্বস্ত করেছেন তিনি অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে আরও কঠোর হবেন।