রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও ‘অথরিটি’ (ডিন-সিন্ডিকেট) নির্বাচন নিয়ে দু’দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা প্যানেল। এই সংগঠনের একাংশ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে আরেকটি পক্ষ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়ে মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) বিকালে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠায় সাদা প্যানেলের একাংশ। এতে ৫৭ জন শিক্ষকের স্বাক্ষর রয়েছে। তাঁরা বলছেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিরোধী দলসমূহের আহুত দেশব্যাপি হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে রাবি শিক্ষক সমিতি ও অথরিটি নির্বাচনসহ কোনো ধরনের নির্বাচন করার পরিবেশ নেই। এছাড়া বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহলে সব প্রকার নির্বাচন বর্জনের জন্য বলা হয়েছে। তাই নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সাদা প্যানেলের নেতারা বলছেন, হাইকমান্ড থেকে তারা কোনো চিঠি পাননি। জাতীয়বাদী শিক্ষক ফোরামের কার্যনির্বাহী কমিটির অধিকাংশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তারা। একটি পক্ষ তাদের পছন্দের প্রার্থী না পাওয়ায় অপপ্রচার চালাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১২ ডিসেম্বর শিক্ষক সমিতি ও অথরিটি নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু দেশের চলমান পরিস্থিতিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে এই নির্বাচন দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন সাদা প্যানেলের সদস্যরা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সার্বিক দিক বিবেচনায় সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে নির্বাচনের নতুন তারিখ নির্ধারণ করে ১৭ ডিসেম্বর। গত মঙ্গলবার শেষ হয় মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়। ইতোমধ্যে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ প্যানেলের সদস্যরা ও সাদা প্যানেলের একাংশ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
নির্বাচন বর্জনকারী সাদা প্যানেলের শিক্ষকরা বলছেন, সারা দেশব্যাপী বিরোধী মত দমন, গুম, খুন, হামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করে বিএনপিসহ বিরোধীদলকে বাদ রেখে আওয়ামী লীগ সরকার একতরফাভাবে একটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে। যা বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসীবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিরোধী দলসমূহের আহুত দেশব্যাপি হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও অথরিটি নির্বাচনসহ কোনো ধরনের নির্বাচন করার পরিবেশ নেই।
তারা নির্বাচন পেছানোর জন্য আবেদনও করেছিলেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেশের পরিস্থিতি বিন্দুমাত্র বিবেচনা না করে সম্পূর্ণ একতরফাভাবে ১৭ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। এছাড়া বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহল থেকে সকল প্রকার নির্বাচন বর্জন করার জন্য বলা হয়েছে। তাই দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন বর্জন করছেন তাঁরা।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া সাদা প্যানেলের শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তারা বলেন, নির্বাচনে অংশ নেবেন কি-না সেটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শিক্ষক ফোরামের একটি সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষক ফোরামের নেতারা সেই সভা না দিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভা ডেকে তারা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়া দলের নীতিনির্ধারণীদের বক্তব্য তাদের জানানো হয়েছিলো। কিন্তু তারা সেটি অমান্য করেছেন। যারা প্রকৃতপক্ষে বিএনপির আদর্শ ধারণ করে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তারা কখনোই নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক এনামুল হক বলেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী তাকে কল দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে নিষেধ করেছেন। সেই সিদ্ধান্তটি শিক্ষক ফোরামের সদস্যদের জানালেও তাঁরা মানেননি।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য একটি নমিনেটিং বোর্ড করা হয়েছে। কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্বাচনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সার্বিক দিক বিবেচনায় ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করেন। এই সিদ্ধান্তটি কার্যনির্বাহী কমিটির দুজন মেনে নিতে পারেননি। তারা এই তারিখে নির্বাচনে অংশ নিবেন না বলে জানান। তাদের পছন্দের প্রার্থী না পাওয়ায় তাঁরা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আর তারা যে হাইকমান্ডের কথা বলছেন, এরকম কোনো লিখিত ডকুমেন্টনস আমাদের কাছে আসেনি। যদি আসে তখন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সাত শিক্ষককে ‘ইউট্যাব’ থেকে বহিষ্কার
এদিকে সারাদেশের জাতীয়তাবাদী শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) রাবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাত শিক্ষককে বহিষ্কার করেছে। গত ৩০ নভেম্বর ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান স্বাক্ষরিত পৃথক পৃথক চিঠিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বহিষ্কৃত সাত শিক্ষক হলেন, ইউট্যাবের যুগ্ম-মহাসচিব অধ্যাপক মাসুদুল হাসান খান, সহ-সভাপতি খোন্দকার ইমামুল হক সানজিদ ও অধ্যাপক হাছানাত আলী, কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যাপক আনয়ারুল কবীর ভূঁইয়া, ড. সাবিরুজ্জামান, অধ্যাপক মতিয়ার রহমান ও অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম।
‘ইউট্যাব’র চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, দেশের এই ক্রান্তিকালে সাংগঠনিক নির্দেশনা উপেক্ষা করে রাবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে আপনাদের সম্পৃক্ত হওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। অতএব সাংগঠনিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আপনাদেরকে ইউট্যাবের সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হলো।