ফ্যাসিস্ট সরকার সুপরিকল্পিতভাবে বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও চাকুরিচ্যুত সব বিডিআর সদস্যকে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে বরিশালে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বরিশাল প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিডিআর কল্যাণ পরিষদ বরিশাল জেলা শাখা।

 

সংবাদ সম্মেলনে বিডিআর থেকে চাকরিচ্যুত হওয়া হাবিলদার মো. শহিদুল ইসলাম তার লিখিত বক্তব্যতে বিতাড়িত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে পিলখানায় পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আমরা ২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাকুরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা এখানে উপস্থিত।

তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার তাদের প্রভু দেশকে সন্তুষ্ট ও সেনাবাহিনীর সামর্থ্য ক্ষুণ্ন করতে বাংলাদেশ রাইফেলসকে ধ্বংস করতে প্রতিশোধের স্পৃহা ও ক্ষমতাকে সুদৃঢ় করতে নীল নকশার অংশ হিসেবে সুপরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

এ হত্যাকাণ্ডে ৫৭ জন মেধাবী সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন শহীদ হয়েছেন।

ঘটনা পরবর্তী ফ্যাসিস্ট সরকার প্রহসনের বিচারের নামে আমলাতন্ত্র ধ্বংস ও নিরীহ ৫৪ বিডিআর সদস্যকে নিরাপত্তা হেফাজতে হত্যা করে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে তথাকথিত বিদ্রোহ সংজ্ঞায়িত করে ১৮ হাজার ৫২০ জন বিডিআর সদস্যকে চাকরিচ্যুতসহ বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়।
হাজার হাজার বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে উল্লেখ করে হাবিলদার মো. শহিদুল ইসলাম কিছু দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- ২০০৯ সালে ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর পিলখানা সংঘটিত সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডকে তথা কথিত বিদ্রোহ সংজ্ঞায়িত না করে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করা; এর পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত সব প্রহসনের বিশেষ আদালতকে নির্বাহী আদেশে বাতিল; চাকুরিচ্যুত সব পদবির বিডিআর সদস্যকে সুযোগ-সুবিধাসহ পুনর্বহাল;

হত্যাকাণ্ড মামলার মহামান্য হাইকোর্টের বিচারকদের রায়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী পিলখানার হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মোটিভ উদ্ধার ও কুশীলবদের শনাক্তকল্পে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন; পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শাহাদাত বরণকারী ৫৭ মেধাবী সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া; ২৫ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে পিলখানার ট্র্যাজেডি দিবস হিসেবে ঘোষণা; পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পরবর্তী তদন্ত/জিজ্ঞাসাবাদে নিরাপত্তা হেফাজতে যেসব নিরীহ বিডিআর সদস্যদের নির্যাতন পূর্বক হত্যা করা হয়েছে তাদের তালিকা প্রকাশ ও মৃত সব পদবির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ সহ পুনর্বাসন করা;

তদন্ত/জিজ্ঞাসাবাদে নিযুক্ত হত্যাকাণ্ডে জড়িত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের শনাক্ত পূর্বক বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা; বিশেষ আদালত কর্তৃক বিভিন্ন মেয়াদে সাজাভোগ শেষকারী বিডিআর সদস্যগণ যারা প্রহসনের বিস্ফোরক মামলায় দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে কারা অন্তরীণ আছে, তাদেরকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে জামিন অথবা মামলা হতে অব্যাহতি পূর্বক মুক্ত করা।

সংবাদ সম্মেলনে চাকুরিচ্যুতদের মধ্যে বিডিআর কল্যাণ পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা হাবিলদার মোশারফ হোসেন, সিপাহি মনিরুজ্জামান, জসিম উদ্দিন, মাহাবুবুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, আ. রহিম, আতাউর রহমান, আলম হোসেন, আতিকুর রহমান সহ প্রায় ৫০ জন বিডিআর সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, বিডিআর সেনাবাহিনী দ্বারা প্রশিক্ষিত সদস্য। কিন্তু বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের সীমান্ত অরক্ষিত করার ফলে এদেশের ফেলানিসহ নিরীহ সাধারণ মানুষ প্রতিদিনই গুলিতে মারা যাচ্ছে।

তারা দাবি করেন, এদেশের বিডিআর সদস্য কোনো বিদ্রোহ করেনি। ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের বিদ্রোহী বানিয়েছে।সংবাদ সম্মেলন শেষে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা বরিশাল জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও বিজিবি মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি দেন

Comments (০)
Add Comment