আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন শাহজাহান ওমর। তবে ভবিষ্যতে আবারও বিএনপিতে ফেরার কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান ওমর বলেন, ‘তওবা-আস্তাগফিরুল্লাহ’।
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দল পরিবর্তন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান ওমর বলেন, এটিকে ডিগবাজি বলে নাকি? এটি সাংবিধানিক অধিকার, আদর্শগত ব্যাপার। সবসময় সবখানে এডজাস্টমেন্ট করা সম্ভব নাও হতে পারে। আমি এই বৃদ্ধ বয়সে এসে মনে হলো জনগণের জন্য কাজ করি। কারণ, আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমার রাজনীতি করে রুটি-হালুয়া লাগে না, আমার মন্ত্রী হওয়ার দরকার নেই। আমি সব হয়েছি, এই মাটি আমাকে সব দিয়েছে।
তিনি বলেন, একটা দল করা আমার সাংবিধানিক অধিকার। দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে বড় বড় রাজনীতিবিদরাও দল পরিবর্তন করেন। আমি পাকিস্তান আর্মিতে ছিলাম, শপথ পাঠ করেই অফিসার হয়েছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় আগস্ট মাস থেকে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি।
একাত্তরের রণাঙ্গনের এই বীর উত্তম আরও বলেন, আমি বরিশাল বিভাগের কমান্ডার ছিলাম। দেশের স্বার্থে পাকিস্তান আর্মি ত্যাগ করেছি। কিন্তু আমি তো পাকিস্তান আর্মির শপথ নিয়েছিলাম, পরে তাহলে পাকিস্তানের সঙ্গে বেইমানি করেছি। কিন্তু দেশের জনগণের সঙ্গে বেইমানি করতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য শেখ মুজিব সরকার আমাকে বীর উত্তম খেতাব দিয়েছে।
সরকারের সঙ্গে আপস করে জামিন পেয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নে শাহজাহান ওমর বলেন, কাশিমপুরে (কারাগারে) আপস করে কেমন করে। ২৯ নভেম্বর নরমাল প্রসেসে আমার জামিন হয়েছে। ৩০ নভেম্বর আওয়ামী লীগে জয়েন করেছি।
তিনি বলেন, জামিন আমার এমনিতেও হতো। ৪ নভেম্বর গ্রেপ্তার হয়েছি, ৬ তারিখে সুপ্রিম কোর্টে জামিনের জন্য আমার আইনজীবী আবেদন করেন। কিন্তু জামিন হলো না। পরের তারিখে গেলাম, তখন আমার আইনজীবী আদালতকে বললেন, সঙ্গে থাকা তিনজনকে জামিন হলো, আমাকে কেন দেওয়া হবে না? এছাড়া আমি চারবারের এমপি, বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। এজন্য আদালত আমাকে জামিন দিয়েছেন।
নাশকতার মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার শাহজাহান বলেন, মামলা হতেই পারে। আমি তো ২৮ অক্টোবর ঘটনার দিন মঞ্চে ছিলাম। এটা তো অস্বীকার করতে পারি না। তাই নাশকতামূলক যে কোনো মামলা হতেই পারে। তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পেলে পুলিশ আমার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেবে, বিচারের কাঠগড়ায় পাঠাবে।
ঝালকাঠিতে নিজের নির্বাচনী আসনে সমাবেশে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল। আমার লাইসেন্স করা পিস্তল আছে, সেটা সেদিন অনিচ্ছাকৃতভাবে সঙ্গে ছিল। এছাড়া ওটা ফরমাল মিটিংও ছিল না। সেদিন আমি শুধু সবাইকে বলেছি, দল পরিবর্তন করা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। আমি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছি, আমার সঙ্গে থাকা সবাই এখন আওয়ামী লীগের। সামনে একসঙ্গে আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করবো।
গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে (ইসি) গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে মেজাজ হারানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার ওমর বলেন, এটা ভুল তথ্য। আমার কাছে আচরণবিধি ছিল না, সেটা ইসি থেকে নিয়ে এসেছি। সাংবাদিকরা চাইলেই আমার ছবি তুলতে পারেন, কিন্তু অন্তত ন্যূনতম একটু বলা উচিত। তাদের বলেছি লুকিয়ে এদিক-সেদিক থেকে কেন ছবি তুলবেন? তারা একটু কথা বলে যদি ন্যূনতম সৌজন্যবোধ দেখাতেন তাহলেই হতো। এরমধ্যে উনারা কোনো কথা না বলেই জিজ্ঞাসা করছেন- আপনি কেন ইসিতে এসেছেন? তারা এটা একশবার বলতে পারেন, জানতে চাইতে পারেন। কিন্তু ন্যূনতম সৌজন্যবোধটা যদি দেখান তাহলেই সমস্যা হয় না। আমি কারও সঙ্গে কোনো দুর্ব্যবহার করিনি। সেখানে অনেক সাংবাদিক ছিলেন, কেমন করে বেরিয়ে যাবো সেই চিন্তায় ছিলাম।
ডিবি কার্যালয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে শাহজাহান ওমর বলেন, কোর্ট থেকে এখানে এসেছি, একটা ব্যক্তিগত কারণে। আমি আগে বিএনপি করতাম, এখন আওয়ামী লীগে জয়েন করছি। এরপর থেকে আমি সাইবার বুলিংয়ের স্বীকার হচ্ছি। আমার ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী এমনকি আমার জুনিয়র আইনজীবীর ফোনে ফোন করে নানা কথা বলা হচ্ছে। সে বিষয়টিই হারুন সাহেবকে (ডিবিপ্রধান) জানাতে এলাম।