ভাঙ্গা, ফরিদপুর থেকে: আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হলো দেশের দক্ষিণের মানুষের। দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে পদ্মা সেতুতে।
মঙ্গলবার (অক্টোবর ১০) সকালে মাওয়া রেল স্টেশন থেকে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে বাস চলাচল উদ্বোধনের এক বছরের বেশি সময় পর রেল চলাচল শুরু।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) দুপুর ১২টা ৫২ মিনিটে ট্রেনের টিকিট কাটেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ১২টা ৫৪ মিনিটে সবুজ পতাকা নেড়ে এ ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর তিনি ট্রেনে ওঠেন। দুপুর ১২টা ৫৯ মিনিটে ট্রেনটি মাওয়া স্টেশন থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানাও ছিলেন।
দুপুর ২টার দিকে ভাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছে দক্ষিণের মানুষের স্বপ্নের ট্রেন।
রিকশা চালক, দিনমজুর থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রীসহ প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ট্রেনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর ৫০ জন সফর সঙ্গীর মধ্যে রয়েছেন- বীরমুক্তিযোদ্ধা ৪ জন, প্রাথমিক ছাত্রছাত্রী ৪ জন, প্রাথমিক শিক্ষক ১ জন, মাদ্রাসা ছাত্রছাত্রী ৩ জন, ইমাম ১ জন, মাদ্রাসা শিক্ষক ১ জন, ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী ২ জন, হিন্দু ধর্মাবলম্বী ১ জন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ১ জন, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ১ জন, রিকশাচালক ১ জন, কৃষক ১ জন, নারী কৃষক ১ জন, গার্মেন্টসকর্মী ১ জন, ফেরিচালক ১ জন, মাঝি ১ জন, মেট্রোরেল কন্ট্রোলার ১, জন, টিটিই ১ জন, ট্রেন চালক ১ জন, স্টেশন মাস্টার ১ জন, ওয়েম্যান ১ জন, বাসচালক ১ জন, হকার ১ জন, সবজি বিক্রেতা ১ জন, পাটকল শ্রমিক ১, নার্স ১ জন, দিনমজুর ১ জন, জেলা আনসার ও ভিডিপি ১ জন, ভিডিপি ১ জন, পুলিশ ১ জন, ফায়ার সার্ভিস ১ জন, স্কাউট ১ জন, বিএনসিসি ১ জন, র্যাব ১ জন, রেল পুলিশ ১ জন, সেনা বাহিনীর ১ জন, নৌ বাহিনীর ১ জন, বিমান বাহিনীর ১ জন, বিজিবি ১ জন, কোস্টগার্ড ১ জন এবং আরএনবির ১ জন সদস্য।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়া স্টেশনের পাশে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের উদ্বোধন-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
বিকেলে ভাঙ্গার ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় অংশগ্রহণ করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জনসভায় যোগদান শেষে প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুর হতে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় যাবেন।
সেখানে বঙ্গবন্ধুর মাজার প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশগ্রহণ নেবেন শেখ হাসিনা।
টুঙ্গিপাড়ায় নিজ বাড়িতে রাত্রিযাপন করবেন তিনি।
বুধবার (১১ অক্টোবর) গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া হতে সড়ক পথে ঢাকায় ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকা-ভাঙ্গা অংশ ৮২ কিলোমিটার চালু হলেও যশোর পর্যন্ত সম্পূর্ণ পথ চালু হবে ২০২৪ সালের ৩০ জুন। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত মোট রেলপথ ১৬৯ কিলোমিটার।
রেল কর্মকর্তারা বলছেন, শুরুতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে তিনটি স্টেশন- মাওয়া, পদ্মা (জাজিরা) ও শিবচরে ট্রেন থামার ব্যবস্থা থাকছে।
১৫ সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলক ট্রেন পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালানো হয়। পরের দিন চালানো হয় মালবাহী ট্রেন। এরই মধ্যে ১২০ কিলোমিটার গতিতেও এ রুটে ট্রেন চালানো হয়েছে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি।
পদ্মা সেতুর হয়ে ঢাকা-যশোর রেলপথ নির্মাণের মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সরাসরি যুক্ত হবে। এ রেলপথের মাধ্যমে নতুন চারটি জেলা মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল রেল সংযোগ স্থাপিত হবে।
একইসঙ্গে আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগে ঘটবে বিপ্লব। ঢাকা থেকে সরাসরি কলকাতা যোগাযোগ নিশ্চিত হবে। আর আখাউড়া আগরতলা রেলপথের মাধ্যমে ভারতের দুই নগরী কলকাতা ও আগারতলার দূরত্ব কমে আসবে মাত্র ৫৫০ কিলোমিটারে।