দক্ষিণে রেলের শুভ প্রবেশ, যাত্রী প্রধানমন্ত্রী

স্বপ্নের পদ্মা সেতু ছিলো দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা। সেই স্বপ্নের রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি উৎসব আর আনন্দে ভাসছে এই অঞ্চলের মানুষ। স্বপ্নের পদ্মা সেতু পার হয়ে এবার প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যাত্রী করে আনুষ্ঠানিকভাবে রেল চললো দক্ষিণে। বলা যায় দক্ষিণে রেলের শুভ প্রবেশ ঘটলো।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে রেলে ওঠেন। তাকে নিয়ে ভাঙার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে রেল ১২টা ৫৯ মিনিটে। এর আগে মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশে অংশ নেন এবং বক্তব্য রাখেন। দুপুর ২টায় তিনি ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে বক্তব্য রাখবেন।

মাওয়া-ভাঙ্গায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আগমনকে কেন্দ্র করে পুরো জেলাসহ আশপাশের জেলা উপজেলাতেও বইছে উৎসবের আমেজ। সর্বস্তরের নেতাকর্মী সমর্থকদের মধ্যে বইছে রেল উদ্বোধন এবং দলীয় নেত্রীর আগমনে আনন্দের উচ্ছ্বাস। তার আগমনকে সামনে রেখে ভাঙ্গাজুড়ে শুরু হয়েছে সাজ সাজ রব।

 

ঢাকা-ভাঙা যে অংশের প্রাথমিকভাবে রেল সংযোগ চলবে সেটি যশোর বেনাপোল পর্যন্ত যাবে। মোংলা বন্দরকে যুক্ত করায় সদ্য চালু হওয়া এই রেলপথ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে জানান রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন।

তিনি বলেন, ‘আমরা পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৪টি জেলাকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসবো। রেলওয়ে সেক্টরের উন্নয়ন বিগত বিএনপি সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’

 

প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, মাওয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিশেষ ট্রেনটি ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বিশেষ ট্রেনে পদ্মা সেতু পার হবেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেল ট্র্যাক নির্মাণ করছে। এর ৮২ কিলোমিটার অংশ ঢাকা ও ভাঙ্গাকে সংযুক্ত করে আগামীকাল খুলে দেওয়া হবে এবং এর যশোর সংযোগকারী অবশিষ্ট অংশটি আগামী বছরের জুনে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গত বছরের জুনে যুগান্তকারী পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছর দুই মাস পর পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রেল সার্ভিস উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে বিশেষ ট্রেনের ট্রায়াল সম্পন্ন হয়।

এর আগে, পদ্মা সেতুতে পাথরহীন রেললাইনের কাজ শেষ হওয়ার পর গত ৪ এপ্রিল ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত পর্যন্ত ট্রায়াল ট্রেন চালায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত বছরের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্প’-এর আওতায় ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল সংযোগ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯,২৪৬.৮০ কোটি টাকা। এতে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২১,০৩৬.৭০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে।

 

প্রকল্পের বিশদ বিবরণে বলা হয়েছে, সমাপ্ত হওয়ার পর, রেল যোগাযোগ পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে রাজধানী শহরের প্রবেশ পথ আরও বর্ধিত হবে-যা মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর এবং নড়াইল জেলার নতুন এলাকাকে যুক্ত করবে।

প্রকল্পটি ঢাকা-যশোর-খুলনাকে ২১২.০৫ কিলোমিটার সংক্ষিপ্ত রুট দিয়ে বিকল্প রেলপথ সংযোগ স্থাপন করবে। এটি বাংলাদেশে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আরেকটি উপ-রুট স্থাপন করবে এবং জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মালবাহী ও বিজি কন্টেইনার ট্রেন পরিষেবা চালু করবে। এই রুটটি কন্টেইনার বহনের জন্য গতি এবং লোড সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হবে।

 

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর আগমনে ফরিদপুর জেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা মিলছে উৎসবের একই চিত্র। এতে করে পুরো ভাঙ্গা অঞ্চলে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে যেন উৎসবের আমেজ বইতে শুরু করেছে। সাজসজ্জার অংশ হিসেবে সড়কজুড়ে টাঙানো হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র ব্যানার ও ফেস্টুন। পদ্মা সেতু উত্তর মুন্সীগঞ্জ থেকে জাজিরা পয়েন্ট, শিবচরের কুতুবপুর, পাচ্চরবাজার, সুর্যনগর, মালিগ্রাম, চান্ডা এলাকাসহ ভাঙ্গার প্রত্যেকটি মোড়ে তোরন ফেস্টুন ও ব্যানারে বহু নেতার রঙ্গিন পোস্টারো বর্ণিল হয়ে উঠছে কমপক্ষে ৩০ কিলোমিটার এলাকা।

Comments (০)
Add Comment