বরিশালের কোতোয়ালি মডেল থানাধীন নদী বন্দর (লঞ্চঘাট) এলাকা থেকে বাবা-ছেলেকে তুলে নিয়ে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে টাকা দাবির অভিযোগ উঠেছে কাউনিয়া থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে। পরে বাবাকে ছেড়ে দিলেও চাহিদা মোতাবেক টাকা না পেয়ে ছেলেকে থানায় আটকে রাখা হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের স্বজনদের।
কাউনিয়া থানা পুলিশের হাতে আটক ব্যক্তির নাম আব্দুল্লাহ বিন লাদেন। তার বাবার নাম মোসলেম জমাদ্দার।
মোসলেম জানান, প্রতিপক্ষের সঙ্গে তাদের একটি মামলা রয়েছে। মামলার নির্ধারিত তারিখে হাজিরা দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে তিনি ও তার ছেলে মেহেন্দিগঞ্জের শ্রীপুর থেকে উপবন নামের একটি লঞ্চে করে বরিশালে আসেন। বরিশাল লঞ্চঘাটে নামার পর পুলিশ পরিচয়ে দুই ব্যক্তি তাদের পথরোধ করেন এবং নাম-পরিচয় জেনে তল্লাশি করেন। তখন কিছু না পেলেও পাশে মাটিতে পড়ে থাকা একটি নীল রংয়ের কাগজ দেখিয়ে বলেন—এই যে পাওয়া গেছে।
মোসলেম বলেন, এরপর পুলিশ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির মধ্যে একজন আমাকে রিকশায় ওঠান এবং আরেকজন তার সঙ্গে মোটরসাইকেলে আমার ছেলেকে ওঠান। পরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে একটি মাঠের (বঙ্গবন্ধু উদ্যান) পাশে নিয়ে যান। এর মাঝেই আমার ছেলেকে মারধর করে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করেন। সেজন্য বাড়িতে আমাদের মোবাইল দিয়েই কল দিয়ে টাকা চাইতে বলেন। বাড়ির লোকজন কোথায় আছি বারবার জানতে চাইলেও তারা তা জানাতে নিষেধ করেন। অনেক পরে ৪০ হাজার টাকা দাবি করে ওই পুলিশ সদস্যরা একটি বিকাশ নম্বর দেন।
কলেজছাত্র আব্দুল্লাহর চাচাতো ভাই আব্দুর রহিম বলেন, চাচা ও চাচাতো ভাইকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া এবং ছেড়ে দেওয়ার জন্য টাকা চাওয়ার বিষয়টি আমরা জানতে পারলে বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নিতে শুরু করি। এরপর যারা টাকা চাচ্ছিল, তাদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, সেটা বরিশাল নগরের আমতলার মোড়ে অবস্থিত। এরই মধ্যে তাদের উদ্ধারে আমরা স্বজনরা কোতেয়ালি মডেল থানা পুলিশের কাছে যাই এবং জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দেই। কোতোয়ালি থানা পুলিশ বিষয়টি জানে না বলে জানালে আমরা সেখানে অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিই।
আব্দুর রহিম আরও বলেন, এরইমধ্যে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চাচা আমাকে জানান, আব্দুল্লাহকে কাউনিয়া থানায় আটকে রেখে চাচাকে এসআই রেদওয়ান হোসেন রিয়াদ কাউয়ারচর খেয়াঘাটে মোটরসাইকেলে নামিয়ে দিয়ে গেছেন। আর টাকা ম্যানেজ করে তার বিকাশ নম্বরে পাঠিয়ে কল দিলে ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে যান।
তিনি বলেন, চাচা মোসলেম জমাদ্দার গ্রামে গরু পালন ও কৃষিকাজ করেন। চাচাতো ভাই বরিশালের সরকারি আলেকান্দা কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র। তাদের পক্ষে এত টাকা ম্যানেজ করা সম্ভব নয়। তাই আমরা এসআই রিয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু তিনি টাকা ছাড়া চাচাতো ভাইকে ছাড়তে রাজি হননি। এ অবস্থায় আমরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হয়েছি।
আব্দুর রহিম বলেন, চাচা পান ছাড়া কিছুই খান না। আর চাচাতো ভাই তো কোনো ধরনের ধূমপানও করে না। সেখানে মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যে।
একই কথা বলেন আব্দুল্লাহর বাবা মোসলেম। তিনি বলেন, আমরা গ্রামের মানুষ। এত কিছু কীভাবে হলো তাই জানি না।
এ বিষয়ে জানতে কাউনিয়া থানায় গিয়ে এসআই রেদওয়ান হোসেন রিয়াদকে পাওয়া না গেলে তার মোবাইল ফোনে কল করা হয়। কিন্তু তিনি তা রিসিভ করেননি।
তবে কাউনিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, এসআই রেদওয়ান হোসেন রিয়াদ মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে তিন পিস ইয়াবাসহ ওই যুবককে আটক করেছেন, এমন খবর আমার কাছে রয়েছে। তার কাছে নাকি আরও ইয়াবা পাওয়ার কথা ছিল। অভিযান শেষ করে বিকেলে তাকে থানায় রেখে যান এসআই রিয়াদ।
তবে কাউনিয়া থানার পুলিশ অন্য থানা এলাকায় অভিযান চালাতে পারে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখবেন। সেই সঙ্গে টাকা চাওয়ার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। এতে যদি এসআই রিয়াদের দোষ পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই ব্যবস্থা নেবে।
আর বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তর জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) বি.এম আশরাফ উল্যাহ তাহের।