নিজের কারাবাসের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জার্মানির সাপ্তাহিক ডি সাইট নামের একটি পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশের সরকার প্রধানকে নিয়েও নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি গত মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়।
সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেন, পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক, খুবই দুঃখজনক। আমাদের অফিসগুলো অজ্ঞাত ব্যক্তিরা দখলে নিয়ে নিয়েছে। এক সপ্তাহ আগে আমাদের সামাজিক ব্যবসা সংস্থাগুলির সদর দফতর যে ভবনে সেখানে প্রায় ৩৫ জনের একটি দল প্রবেশ করে। তারা নিরাপত্তারক্ষীদের পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে আমাদের আটটি কোম্পানি দখলের ঘোষণা দেয়। রাত ৯টা পর্যন্ত আমাদের কর্মীদের বের হতে দেয়নি তারা। রাতে ভবন থেকে বের হওয়ার সময় তারা অফিসগুলোতে নিজেদের তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরের দিন সকালে তারা আবার ফিরে আসে এবং কোম্পানির কর্মীদের প্রবেশ করার জন্য তালা খুলে দেয়। আস্তে আস্তে তারা আরো আগ্রাসী হয়ে উঠছে।
প্রফেসর ইউনূসের কাছে জানতে চাওয়া হয় এই মানুষরা কারা? এর উত্তরে তিনি বলেন, আমি যে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম সেই ব্যাংকের পাঠানো লোক হিসাবে তারা নিজেদের পরিচয় দেয়। আমাকে ২০১১ সালে ওই ব্যাংক থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। যারা ভবন দখল নিয়েছে তারা সরকারের লোক কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ইউনূস বলেন, আমি এমনটা বলতে পারি না। আমি যা জানি তা হলো, আমরা পুলিশে ফোন করেছিলাম কিন্তু আমরা কোনো সাহায্য পাইনি।
ডি সাইট প্রফেসর ইউনূসকে প্রশ্ন করে, যারা তাকে চাপ দিয়ে আসছে এতদিন তাদের সমালোচনা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছিলেন ইউনূস। তবে এখন কেনো প্রকাশ্যে এ নিয়ে কথা বলছেন তিনি? জবাবে ইউনূস বলেন, আমাদের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। বাংলাদেশে সবাই জানে, এসব কীভাবে ঘটে। কারও নাম নিতে নেই; এটা অনেক খারাপ পরিণতি নিয়ে আসে।
গত ৭ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রফেসর ইউনূস বলেন, এ নির্বাচনে কোনো বিরোধী দল ছিল না। প্রধান বিরোধী দলের নেতারা কারাগারে ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে তাকে ‘গরীবের রক্তচোষা’ বলে অভিহিত করেছিলেন, এ বিষয়ে ইউনূসের কাছে জানতে চায় ডি সাইট। এ প্রসঙ্গে ইউনূস বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) দাবি করেন যে আমি গরিব মানুষের রক্ত চুষতে ব্যাংক তৈরি করেছি, তাদেরকে অতিরিক্ত সুদে ঋণ দিয়েছি। কিন্তু সত্য হচ্ছে এর বিপরীতটি। এই ঋণের কারণেই দরিদ্র মানুষরা তাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে এবং দারিদ্র্য থেকে বাঁচতে সক্ষম হয়েছিল। এমনকি এই ব্যাংকটির মালিকও গ্রামের ওই দরিদ্ররা। শেখ হাসিনা আরও দাবি করেন যে, দেশের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের তহবিল আটকে দিতে আমি মার্কিন সরকারের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করেছি, যেটা আমি কখনো করিনি।
সাপ্তাহিক ডি সাইট নামের এই গণমাধ্যমটি আরো লিখেছে, নিজ দেশে ৮৩ বছরের ইউনূসের কারাগারে যাওয়ার উদ্বেগ বাড়ছে। এমতাবস্থায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ শত শত নোবেলজয়ী ইউনূসের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ২০২৩ সালের মার্চ থেকে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একাধিক খোলা চিঠি লিখেছেন, যাতে তারা ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান ‘নিরবিচ্ছিন্ন হয়রানির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেন। কিন্তু শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে জানুয়ারিতে ড. ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এখন যদিও তিনি জামিনে আছেন। তবে গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনূস অভিযোগ করেন, তাদের আটটি প্রতিষ্ঠানকে জবরদখল করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেই তিনি ডি সাইটকে ওই সাক্ষাৎকারটি দেন।