স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়ে রেল চলাচলের মাহেন্দ্রক্ষণকে ‘স্বপ্ন পূরণের দিন হিসেবে’ অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) মাওয়া রেল স্টেশনে ঢাকা-ভাঙা রেল চলাচল উদ্বোধন করতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে স্বপ্ন পূরণের দিন। এই শুভদিনে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
এই মাহেন্দ্রক্ষণে তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, চার নেতা, নিহত মুক্তিযোদ্ধা, ’৭৫ এর পনেরো আগেস্ট নিহত শহীদদের।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেন, ’৭৫ থেকে ’৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ এই সময়ে যারা ক্ষমতায় ছিলো তারা কেন উন্নয়ন করতে পারেনি। কারণ তারা স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করেনি। এই দেশের মানুষের দিকে তাকায়নি। আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় এসে যে পদক্ষেপ নেয় তার সুফল পাচ্ছে মানুষ।
এ সময় ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন আমরাই প্রথম যমুনা নদীর ওপর একই সাথে বাস ও ট্রেন যোগাযোগের বাস্তবায়ন করি। এ সময় আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিপুলসংখ্যক নতুন রেলপথ তৈরিসহ রেলে উন্নয়নের নেওয়া যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়ার তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
রেল গতিশীল করতে তার সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে যাত্রীদের যাত্রা আরো দ্রুততর হবে।
আগামী তিন চার বছরের মধ্যে রেলওয়ে যোগাযোগ আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং মানুষের জীবনমান আরও উন্নয়ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে সরকারপ্রধান বলেন, ঢাকা থেকে আমরা ভাঙা পর্ন্ত করেছি, এটা যশোর পর্যন্ত সংযোগ হবে। সেখান থেকে মোংলা পর্যন্ত সংযোগ হবে।
ভাঙা থেকে বরিশাল-ঝালকাঠি-পটুয়াখালী হয়ে পায়রাবন্দরে রেল সংযোগ তৈরি করতে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে সমীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ সময় রেলের সিগনাল ব্যবস্থাসহ সবকিছু আধুনিকায়ন করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদী না থাকে এবং বৈশ্বিক যে অনৈতিক মন্দার প্রভাব যেন বাংলাদেশে না আসে সেজন্য সবাইকে জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী দুঃসময়ে আমরা যদি কৃষি উৎপাদন বাড়াই তাহলে কারো কাছে হাত পাততে হবে না। কারো কাছে মাথা নিচু করে নয়, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উচু করে চলবে।
সরকারের সামাজিক নিরাপত্তায় বিভিন্ন প্রকার ভাতায় ১০কোটি মানুষ উপকার ভোগী হচ্ছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, কৃষি উৎপাদন নির্বিঘ্ন করতে সারের ব্যাপক ভর্তুকি এবং কৃষি যান্ত্রিকীরণের সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য দেশকে আরও উন্নত করা। আমরা শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। আমরা আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। স্কৃলে স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব করে দিচ্ছি। লার্নি অ্যান্ড আর্নিং এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রযুক্তিতে বিপুলসংখ্যক দক্ষ জনশক্তি তৈরি করছে সরকার।
সরকারের যুগান্তকারী পরিকল্পনায় দারিদ্র্যের হার অনেক কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। ৮ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে জমিসহ ঘর দিচ্ছি।
পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক চক্রান্ত হয়েছিলো উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, এক ভদ্রলোক সামান্য একটি ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে পারবে না বয়সের কারণে, সেটি বলার কারণে ষড়যন্ত্র করে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করেছিলো। সেদিন নিজস্ব অর্থায়নের পদ্মা সেতু করার কথা বলেছিলাম। বঙ্গবন্ধু বলেছিলো, ‘কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।’ দাবায়ে রাখতে পারেনি।
পরে ঢাকা-ভাঙা লেল চলাচলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সুধী সমাবেশে অনুষ্ঠান শেষে রেলে চড়ে মাওয়া থেকে ভাঙার উদ্দেশ্য রওনা দেন তিনি। সেখানে ফরিপুর জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে জনসভায় বক্তব্য রাখবেন তিনি।
এর আগে পদ্মা সেতু হয়ে রেল উদ্বোধনের জন্য মাওয়ায় পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) বেলা ১১টায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পৌঁছান তিনি। এর আগে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে সড়ক পথে মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী।